বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তরমুজে কোথাও রাঙা হাসি কোথাও নোনা জলের কান্না। কারো হাতে লাখ টাকার স্বপ্ন কেউ আবার নিঃস্ব হওয়ার যন্ত্রণায় ধুকছে। গলাচিপা উপজেলায় এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। গলাচিপায় তরমুজের পাইকারী বাজারে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে। কিন্তু গত তিনদিন ধরে পূর্ণিমার প্রভাবে পূবের বাতাসে উপকূলীয় এলাকার ওয়াবদা বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর এতেই ক্ষতি হয়ে যায় তরমুজসহ রবিশস্য চাষিদের। সব মিলিয়ে কিছু ক্ষতি হলেও যা লাভ হয়েছে তাতেই খুশি কৃষকরা। এ তরমুজ বিক্রিকে কেন্দ্র করে গলাচিপার হরিদেবপুর খেয়াঘাটে জমে ওঠেছে তরমুজের পাইকারী বাজার। সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট কৃষক ও আড়ৎদারদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পক্ষিয়া গ্রামের নুর জামাল মাতব্বর বলেন, আড়াই একর জমিতে তরমুজ চাষ করি। এতে প্রায় দেড় লাখ খরচ হয়েছে। এ বছর ফলন ও দাম দুইডাই ভালো পাইছি। গত সোমবার হঠাৎ করেই নদীর পানিতে তরমুজ ক্ষ্যাত ডুইব্বা যায়। সব তরমুজ আনতে না পারলেও প্রায় ৫ হাজার তরমুজ আনছি। এতে প্রায় সব খরচ বাদে দুই লাখ টাকা লাভ অইবে। গলাচিপা সদর ইউনিয়নের উত্তর চরখালী গ্রামের আব্দুল জলির হাওলাদারের তরমুজ ক্ষেতের ছবি তুলতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এহন আইছেন কী করতে? আমি শ্যাষ। তিনি তার ক্ষেতে নেমে পানির মধ্যে হেঁটে হেঁটে পরম আদরে তরমুজগুলো নাড়াচাড়া করছেন। এ সময় তিনি বলেন, আড়াই একর জমিতে তরমুজ দিছি। প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাহা খরচ অইছে। সোমবার দুপুরে তরমুজ ক্ষ্যাতে আইয়া দেহি পানিতে ডুইব্বা রইছে। একটা তরমুজও বেচতে পারি নাই। তিন দিন সময় পাইলে ৫ লাখ টাহা বেচতে পারতাম। এহন দেনার দায় পলান দেওয়া লাগবে। উপজেলার চিকনিকান্দি ইউয়িনের মো. হাসেম গাজী বলেন, আমি ৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছি। খরচ অইছে তিন লাখ ৬৫ হাজার টাহা। আইজ পর্যন্ত (বুধবার) বিক্রি করছি ৮ লাখ টাহার তরমুজ। আরো কমপক্ষে ৫ লাখ টাহার তরমুজ বেচমু। এইবার আমাগো এলাকায় হগুলডির লাভ অইছে। যশোরের রূপদিয়া এলাকার তরমুজের পাইকারী আড়ৎদার আব্দুল কাদের খান বলেন, ‘নয় বছর ধরে গলাচিপা এলাকায় তরমুজের ব্যবসা করছি। এবছর তরমুজের ফলন ও দাম দুইটাই ভালো। এ বছর বড় তরমুজ প্রতি শ ২০ হাজার টাকা, দুই নম্বর গ্রেডের তরমুজ ১১ থেকে ১৩ হাজার, তিন নম্বর গ্রেডের ৭ থেকে নয় হাজার টাকা দরে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর মানুষ তরমুজ কিনছে বেশি। তাই দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষকও খুশি আমরাও খুশি। গলাচিপার তরমুজ ঢাকা, নাটোর, বগুড়া, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া টাইঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাহিদা রয়েছে। গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ বলেন, এবছর গলাচিপা উপজেলায় লক্ষমাত্রায় অনুযায়ী ৫ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষক তরমুজ চাষ করেছে। শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে তিন শ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে। গত তিন দিন ধরে নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ওয়াবদা বেড়িবাঁধের বাইরের কিছু তরমুজসহ রবিশষ্যের ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এতে সব মিলিয়ে এক শ হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষেত ডুবে গেছে। যা টাকার মূল্যে দেড় কোটি টাকার মত হবে। অন্যান্য রবিশষ্যেও ক্ষতি হয়েছে তা এখনো হিসাব নিরুপন করা হয়নি।
Leave a Reply